রক্তে হিমোগ্লোবিনের কাজ কি ? জেনে নিন হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়

জেনে নিন হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর উপায়

হিমোগ্লোবিন শব্দটি আমরা কোনো না কোনোভাবে সবাই শুনেছি,  এই সাথে এটাও জেনেছি যে হিমোগ্লোবিন রক্তের সাথে মিশে থাকে কিন্তু হিমোগ্লোবিন কি কিভাবে কাজ করে এর সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন জানা নেই। 

 মানুষ সহ সকল মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণীর শরীরে রক্তের অস্তিত্ব বিরাজমান তাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বিরাজমান।  হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিচালনাসহ আরো নানাবিধ কাজ সম্পন্ন করে থাকে।  বুঝতেই পারছেন রক্তে হিমোগ্লোবিনের গুরুত্ব কতটা বেশি কারণ বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার অক্সিজেনের। 

 এবার জেনে নেই হিমোগ্লোবিন কি হিমোগ্লোবিন কিভাবে কাজ করে থাকে হিমোগ্লোবিনের অভাবে কি কি সমস্যা হতে পারে এছাড়াও হিমোগ্লোবিন আপনার শরীরে কি পরিমান থাকা উচিৎ এসব বিষয়ে বিস্তারিত। 


হিমোগ্লোবিন কি 

হিমোগ্লোবিন হলো আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় একটি প্রোটিন।  মেডিকেল সাইন্স এর ভাষায় একে মেটালো প্রোটিন বলা হয়ে থাকে।  হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে থাকা লোহিত রক্ত কণিকার মধ্যে অবস্থান করে এবং রক্তের প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে।  আমাদের রক্ত যে দেখতে লাল রঙের দেখায় তা মূলত এই হিমোগ্লোবিনের কারণেই হয়ে থাকে। 

 হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় দুই ধরনের প্রোটিন গঠনে ভূমিকা রেখে থাকে।  প্রথমটি হচ্ছে টারশিয়ারি আর অন্যটি হচ্ছে কোয়াটারনারি।  এই দুই ধরনের প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অনেক দরকারী।  এছাড়াও প্রোটিনকে স্থায়িত্ব দান করার জন্য হিমোগ্লোবিন রক্তের মাঝে আলফা হেলিক্স নামের এক ধরনের অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন করে থাকে।


হিমোগ্লোবিনের কাজ কি 

আমরা এটা জেনেছি যে হিমোগ্লোবিন বর্ণহীন রক্তকে লাল করতে ভূমিকা রাখে,  একইসাথে রক্তে থাকা নানা রকম উপাদানের পর্যাপ্ত তা নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখে থাকে তবে হিমোগ্লোবিনের যে সেটি হলো রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করা।  আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হিমোগ্লোবিনের আসল কাজ। 

১,  যখন বাতাস থেকে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে তখন প্রথম অক্সিজেন আমাদের ফুসফুসে প্রবেশ করে, আর ফুসফুস থেকে অক্সিজেন শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমানভাবে বন্টন করে দেওয়ার জন্য কাজ করে থাকে হিমোগ্লোবিন। 

২,  হিমোগ্লোবিন শুধুমাত্র অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে না বরং শরীর থেকে অক্সিজেন সরবরাহের সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিনিময় করে সেগুলো সংগ্রহের মাধ্যমে ফুসফুসের পাঠিয়ে দেয় তারপর সেটাকে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বাহিরে বের করে দেয়।

৩,  হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের রক্তে নানা প্রকার বিষাক্ত ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত হতে বাধা প্রদান করে।  এমনকি আমাদের শরীরে যে নানা প্রকার বিষাক্ত গ্যাস জমা হয় হিমোগ্লোবিন সেগুলো কেউ শরীরের বাহিরে বের করে দিতে সাহায্য করে। 


রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান

 মানুষের দেহে রক্ত কণিকার 96 থেকে 97 ভাগ হয়ে থাকে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিনের অংশ।  আর মোট রক্তের ওজনের 35% দখল করে থাকে হিমোগ্লোবিন।  আমাদের শরীরে বিদ্যমান 1 গ্রাম হিমোগ্লোবিন বাতাস থেকে প্রতিবার 1.36 মিলিলিটার কখনো বা তার চেয়ে কিছু বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩০-১৮০ গ্রাম/ লিটার আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১৫-১৬৫ গ্রাম/লিটার। এ ক্ষেত্রে পুরুষ কিংবা মহিলা যেই হোক যদি কারো হিমোগ্লোবিনের ৭০ কিংবা ৮০ গ্রাম/লিটার হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যানিমিয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কত

রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা বয়স অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে,  মেডিকেল সাইন্স অনুসারে কোন বয়সে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত হওয়া উচিত সেগুলো নিচে দেওয়া হল। 

  •  সদ্য ভূমিষ্ঠ মানব শিশু - ১৭ থেকে ২২ ডেসিলিটার
  •  এক সপ্তাহ বয়সের শিশু 15 থেকে 20 ডেসিলিটার
  •  এক মাস বয়সের শিশু 11 থেকে 15 ডেসিলিটার
  •  সাধারণ শিশু 11 থেকে 14 ডেসিলিটার
  •  প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ 14 থেকে 18 ডেসিলিটার
  •  প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা 12 থেকে 16 ডেসিলিটার
  • মাজ বয়সী পুরুষ 12.4 থেকে 14.9 ডেসিলিটার
  •  বয়সী মহিলা 11.7 থেকে 13.8 ডেসিলিটার

আরো  খবর পরুনঃ    কনডম ব্যবহারের পদ্ধতি উপকারিতা এবং দাম জেনে নিন

রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবে কি হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দেয়,  রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবে কি কি সমস্যা হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরা হলো।

  • ১. শরীর ফ্যাকাসে থাকবে ও প্রচুর ঘাম হবে।
  • ২. বুক ধড়পড় করবে।
  • ৩. নাড়ির স্পন্দন দ্রুত হবে।
  • ৪. মাথা ঘোরার সঙ্গে মাথা ব্যথাও থাকবে।
  • ৫. চোখে ঝাপসা কিংবা কম দেখবে।
  • ৬. মুখের কোণে ও জিহ্বায় ঘা।
  • ৭. লৌহের অভাবজনিত সমস্যা কইলোনশিয়া।
  • ৮. দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব।
  • ৯. হজমে সমস্যা।
  • ১০. পুরো শরীর ফুলে যাওয়া।
  • ১১. পা ফুলে যাওয়া।
  • ১২. শ্বাসকষ্ট।
  • ১৩. অনিদ্রা কিংবা ঘুম কম হওয়া।
  • ১৪. এনজাইনা।
  • ১৫. হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যাওয়া।
  • ১৬. দ্রুত হার্টবিট।


 রক্তের হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে আপনার আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।  আর আপনি যদি আমাদের আর্টিকেলে আপনার কোন লেখা প্রকাশ করতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের কন্টাক্ট পেইজের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আরো  খবর পরুনঃ  ৩ জন মিলে ১ মাস ধরে প্রতি রাতে কিশোরীকে গণধর্ষণ

আরো  খবর পরুনঃ   পরকীয়া প্রেমিকার ট্রাংকে লুকিয়ে প্রাণটাই গেল যুবকের



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন